WB Primary Teachers Recruitment 2022: পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের কেন্দ্রে হয়ে রয়েছে। এবার এই বিষয়টি নতুন মোড় নিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। আদালতের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে, যা রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শিক্ষক নিয়োগের একের পর এক ধাক্কা পর্ষদ সভাপতির।
মামলার পটভূমি
২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘিরে একাধিক অভিযোগ সামনে আসে। বিশেষ করে, D.El.Ed ও B.Ed যোগ্যতার প্রার্থীদের নিয়ে নীতিগত দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠেছে। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এই নিয়োগে D.El.Ed ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও অভিযোগ ওঠে যে, পর্ষদ সেই নির্দেশ যথাযথভাবে মানেনি। এর ফলে অনেক যোগ্য D.El.Ed প্রার্থী সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
সম্পর্কিত পোস্ট
Adani Electric Cycle 2025: মাত্র ₹599-এ বুকিং, ২০০ কিমি রেঞ্জের বাজেট-ফ্রেন্ডলি পরিবহন সমাধানকেন আদালতের তলব
ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। এই মামলার মূল অভিযোগ—পর্ষদ আদালতের পূর্ববর্তী নির্দেশ পালন করেনি। এর মধ্যে অন্যতম ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা। এদিকে আদালত বিষয়টিকে গুরুতর মনে করে পর্ষদ সভাপতিকে সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেয়।
D.El.Ed বনাম B.Ed যোগ্যতার দ্বন্দ্ব
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই D.El.Ed (Diploma in Elementary Education) ও B.Ed (Bachelor of Education) ডিগ্রিধারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কঠিন হারে চলছে।
- D.El.Ed ডিগ্রিধারী: সাধারণত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এবং ক্লাস I থেকে V পর্যন্ত পড়ানোর জন্য উপযুক্ত ধরা হয়ে থাকে।
- B.Ed ডিগ্রিধারী: এই ডিগ্রি সাধারণত উচ্চ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য হলেও পূর্ববর্তী নিয়োগে এদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরের নিয়োগে প্রথমে D.El.Ed প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তবে অভিযোগ রয়েছে যে বাস্তবে তা হয়নি।
চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এদিকে আদালতের এই তলবের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের চাকরিপ্রার্থীরা নতুন আশার আলো দেখছেন। অনেকের মতামত অনুযায়ী, আদালতের হস্তক্ষেপে এবার হয়তো প্রকৃত যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে এবং অন্যায়ভাবে বঞ্চিত প্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাবেন।
একজন চাকরিপ্রার্থী বলেছেন—
“আমরা বহু বছর ধরে পরীক্ষা দিয়ে আসছি, কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় নিয়োগ আটকে আছে। আদালত যদি ন্যায় বিচার দেয়, তবে আমাদের কষ্ট সার্থক হবে।”
এই ঘটনার সম্ভাব্য প্রভাব
১. স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
আদালতের নজরদারিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হতে পারে বলে। প্রার্থীদের তালিকা ও নির্বাচন পদ্ধতি প্রকাশ্যে আনা হবে বলে আশা করা যায়।
২. ভবিষ্যতের নীতিমালা নির্ধারণ
এই মামলার রায় ভবিষ্যতের নিয়োগ নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, বিশেষ করে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণে।
৩. প্রার্থীদের আস্থা বৃদ্ধি
সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতি চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা কিছুটা হলেও ফিরে আসতে পারে বলে জানা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
এদিকে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলাটি কেবল একটি আইনি দ্বন্দ্ব নয়; এটি শিক্ষা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। তাদের পরামর্শ হল, পর্ষদকে দ্রুত আদালতের নির্দেশ মেনে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখাতে হবে।
রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় এর প্রভাব
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুধু চাকরিপ্রার্থীদের জীবিকা নয়, গ্রামীণ ও শহুরে স্কুলগুলোর শিক্ষার মানের সঙ্গেও জড়িত রয়েছে। আর যদি যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হন, তবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা। তাই এই মামলার সঠিক সমাধান রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সামনে কী হতে পারে
আসন্ন শুনানিতে আদালত যদি স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়, তবে—
- নিয়োগ তালিকা পুনর্গঠন হতে পারে এটি
- D.El.Ed প্রার্থীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হতে চলেছে
- ইতিমধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু প্রার্থীর চাকরি বাতিলও হতে পারে
সব শেষে বলা যায়, এই রায় শুধু বর্তমান নিয়োগ নয়, ভবিষ্যতের প্রতিটি নিয়োগের জন্য দিকনির্দেশক হয়ে উঠতে পারে।
প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের এই বিতর্ক রাজ্যের হাজার হাজার প্রার্থীর জীবনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। আদালতের হস্তক্ষেপে একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ সমাধান বের হবে বলে অনেকেই আশা করে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ই ঠিক করে দেবে, D.El.Ed বনাম B.Ed দ্বন্দ্বে কারা এগিয়ে থাকবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া কোনদিকে যাবে। রাজ্যের নজর এখন কলকাতা হাইকোর্টের দিকে, যেখানে এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিষ্পত্তি হতে চলেছে।

Aitpune is a experience content writer in various niches. I have 5 years experience in the field of content writing specially Bengali language. But i also work in English. So if any error done by me please forgive me.Thank You